স্কুলশিক্ষক মায়িশা ফারাহ্ বাধ্য হয়ে এখন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ নিয়েছেন ।করোনাভাইরাস কেড়ে নিয়েছে স্বামীকে। তারও আগে করোনাকালেই গেছে দুজনের চাকরিও। বেঃসরকারী একটি বীমা কোম্পানীর অফিস সহকারীর চাকরি হারানোর পর স্বামী মতিউর রহমান (২৯) ভাড়ায় ইজিবাইক চালাতেন। কিন্তু দেড় মাসের মাথায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে চরম সংকটে পড়েছেন স্কুলশিক্ষক মায়িশা ফারাহ্ (২৪)। পাঁচ ও আড়াই বছর বয়সী দুই শিশুকন্যা এবং বৃদ্ধ মা–বাবাকে নিয়ে দিশেহারা তিনি। সবার খাবার জোটাতে শিক্ষকতার পেশা খুইয়ে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ নিয়েছেন।
মায়িশা ফারাহ্র স্বামীর একার উপার্জনে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। এ কারণে বগুড়া শহরের নারুলী এলাকার মরিয়ম কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। সম্মানী ছিল ২ হাজার ২০০ টাকা। স্কুল শেষে পাঁচ-ছয়টি শিশুকে পড়ানো হতো। এতে আরও হাজার তিনেক টাকা আয় হতো। স্বামী আর তার উপার্জনে ভালোই চলছিল। কিন্তু করোনা সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিল।
গত বছর মার্চে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হলে শিক্ষকতার চাকরি হারাতে হয় মায়িশাকে। টিউশনিও বন্ধ হয়ে যায়। ওদিকে করোনার কারণে জনবল ছাঁটাই করায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে চাকরি হারান স্বামী মতিউর রহমান। দুজনেরই চাকরি হারানোর কারণে দিশেহারা অবস্থা। স্বামী মতিউর ভাড়ায় ইজিবাইক চালাতে শুরু করেন।’
গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর মাসে মতিউর করোনায় আক্রান্ত। প্রচণ্ড জ্বর, শ্বাসকষ্ট। তাঁকে নেওয়া হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ৩০ ডিসেম্বর মুঠোফোনে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন হাসপাতাল থেকে। মতিউর মায়িশাকে বলেন, ‘খুব কষ্ট হচ্ছে, মাফ করে দিয়ো।’ ৩১ ডিসেম্বর শ্বাসকষ্ট বেশি হয়। আইসিইউর ব্যবস্থা না হওয়ায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মতিউর। মায়িশা বলেন, ‘করোনায় মারা যাওয়ার কারণে শেষ দেখাও হয়নি ওর সঙ্গে। তিন দিন পর সন্তানদের নিয়ে শুধু কবর দেখে এসেছি।’
গত মার্চে বগুড়া শহরের একটি ডিপার্টমেন্ট স্টোরে অনলাইনে পণ্য সরবরাহের কাজ নেন মায়িশা। হেঁটে হেঁটেই মানুষের বাসাবাড়িতে পণ্য সরবরাহ করে দিন শেষে গড়ে ১৫০ টাকা উপার্জন হতো। কিন্তু রমজান মাসে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ায় অনলাইনে বিক্রি–মন্দার কারণে কাজ হারাতে হয়। সবশেষে একটা কাজের জন্য আকবরিয়া লিমিটেডে যান মায়িশা। সেখানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজের আশ্বাস পান।
0 মন্তব্যসমূহ