৩৮ স্ত্রী, ৯৪ সন্তান ও ৩৩ নাতি-নাতনি নিয়ে গঠিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ একান্নবর্তী পরিবারের প্রধান ভারতের মিজোরাম রাজ্যের বাসিন্দা জিওনা চানা ৭৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
জানা যায়, রবিবার স্থানীয় সময় দুপুর ৩টায় মিজোরামের ত্রিনীতি নামক হাসপাতালে জিওনা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। ওই হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছিল তার।
১৯৪৫ সালের ২১ জুলাই তার জন্ম। প্রথম স্ত্রী তার চেয়ে তিন বছরের বড়। জিওনার বয়স যখন ১৭ তখন তিনি তাকে বিয়ে করেন। এরপর একে একে তিনি ৩৮ জনকে বিয়ে করেছেন। তাদের সন্তানের সংখ্যা ৯৪ জন। ধারণা করা হয়, ৩৮ স্ত্রী ও ৮৯ সন্তান নিয়ে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবারের কর্তা ছিলেন। এ পরিবারের কারণে তাদের গ্রাম বাকতাওং ৎলাংনুয়াম ও মিজোরাম পর্যটকদের অন্যতম আগ্রহের জায়গা হিসেবে বিবেচিত হয়।
রাজ্যের বাকতাওং ৎলাংনুয়াম গ্রামে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। মিজোরামের পাহাড়ি এলাকায় চার তলা একটি বাড়িতে সর্ববৃহৎ ওই পরিবারের বাস করছে। ‘ছুয়ান থার রুন’ বা ‘নতুন প্রজন্মের বাড়ি’ নামে ওই বাড়িতে রয়েছে শতাধিক কক্ষ। তবে গোটা বাড়ি মিলে রান্না করার ঘর একটি। সেখানেই পুরো পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। ভবনের পৃথক পৃথক কক্ষে জিওনা চানার সন্তানরা, তাদের স্ত্রী ও তাদের সন্তানদের বাস। অপরদিকে বাড়িটির একটি গণরুমে বাস করেন তার স্ত্রীরা। স্ত্রীদের ঘরের সঙ্গে লাগোয়া ঘরটিতে থাকতেন জিওন চানা। সেটাই তার ব্যক্তিগত শয়নকক্ষ। বাড়িতে জিওনার স্ত্রী, সন্তানদের জন্য আলাদা আলাদা কক্ষ থাকলেও তারা সবাই একত্রেই খেতেন।
সব মিলিয়ে পরিবারটির সদস্য সংখ্যা ১৮১ জন। চানার পুত্রবধূ রয়েছেন ১৪ জন। জিওনা চানা অবশ্য নিজেকে ঈশ্বরের বিশেষ সন্তান বলে দাবি করেন। নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও তার অনুসারীর দেওয়া অর্থ দিয়েই চলতো বিশাল এই পরিবার।
এর আগে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জিওনা বলেন, ‘ঈশ্বরই আমাকে এত বড় পরিবার দেখার সুযোগ দিয়েছেন। আমি সত্যি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। ৩৯ রমণীর স্বামী ও পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পরিবারের প্রধান হওয়াটা বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার।’
প্রথম স্ত্রী যাথিয়াঙ্গির তৈরি করা কর্মতালিকা রয়েছে। গৃহস্থালির কাজ সামলানোর ক্ষেত্রে তার ওই তালিকা কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়। আদিবাসী খৃস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান জিয়োনা চানার পরিবার একটু ভিন্নভাবেই ধর্ম পালন করে।
জিয়োনা চানা নিজ গ্রামের একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রধান ছিলেন। চানা সম্প্রদায় নামে পরিচিত এই গোষ্ঠীটি পরিবারের পুরুষ সদস্যদের বহু বিবাহ অনুমোদন করে। প্রায় চারশ’ পরিবার এই গোষ্ঠীর অনুসারী।
১৯৩০ সালের শুরুর দিকে জিয়োনার বাবা চালিয়েন চানা সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন। তার ধারক-বাহক এই চানা পরিবার। এলাকায় তাদের অনুসারী রয়েছে অসংখ্য। আর এ কারণেই তাদের পরিবারটিকে গ্রামের নেতা হিসেবে সব নির্দেশ মেনে চলা হয়।
0 মন্তব্যসমূহ