পশ্চিমবঙ্গেও একদিনে তিনজন
‘চুম্বক ম্যানে’র খোঁজ মেলে। প্রথম খবরটা আসে শিলিগুড়ি থেকে। তারপরই আসানসোল
(Asansol), নদিয়ার (Nadia) পলাশীপাড়া এবং বসিরহাটেও খোঁজ মেলে ম্যাগনেট মানুষের। যদিও
এই চুম্বকত্বের সঙ্গে করোনা টিকার কোনও যোগ নেই বলেই দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা। সে
যে যাই বলুন না কেন দেশজুড়ে ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে ‘ম্যাগনেট ম্যান’ রহস্য।
মাকড়সা কামড়ালে স্পাইডার ম্যান । তেমনই নাকি টিকা নেওয়ার পর চুম্বক
ম্যান! শিলিগুড়ির নেপাল চক্রবর্তী, তেহট্টের প্রবীর মণ্ডল, বসিহাটের শংকর
প্রামাণিক। তাঁদের সকলেরই দাবি, টিকা নিয়েই তাঁদের গায়ে আটকে যাচ্ছে লোহার বস্তু।
গত ৭ জুন টিকা নেন শিলিগুড়ির ফুলেশ্বরী মোড়ের বাসিন্দা নেপাল চক্রবর্তী। কোভিশিল্ড
টিকার ডোজ নিয়েছিলেন। তারপর নিছকই ঘরে বসে মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে নজরে আসে ভিন রাজ্যের
এক ব্যক্তির শরীরে চুম্বকের মতো আটকে যাচ্ছে হাতা, খুন্তি, চামচ। ব্যাস!
সম্পূর্ণ কৌতূহলের বশবর্তী
হয়ে নেপাল চক্রবর্তী নিজে শরীরে পরীক্ষা করেন গত শুক্রবারে। তারপরেই
চোখ কপালে ওঠে তাঁর। দেখা যায়, ভিন রাজ্যের সেই ব্যক্তির মতো কাকতলীয়ভাবে তাঁর
শরীরেও আটকে যাচ্ছে রান্নার নানা উপকরণ থেকে খুচরো পয়সা।
যদিও কোনওভাবেই এমনটা
সম্ভব নয়, এর সঙ্গে কোভিশিল্ড বা টিকার কোনও সম্পর্ক নেই। দাবি শিলিগুড়ির বিশিষ্ট চিকিৎসক
শঙখ সেন এবং বিজ্ঞান মঞ্চের কার্যকরী সভাপতি গোপাল দে-র।
নদিয়ার পর এবার হাওড়ায় ভ্যাকসিন
নেওয়ার পর গায়ে আটকে যাচ্ছে ধাতব হাতা চামচ সেফটিপিনের মতো সামগ্রী। অবাক করা এই দৃশ্য
হাওড়ার বালির দ্য টেম্পল রোডের। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর রবিবার নদিয়ার কৃষ্ণনগরের
ঘূর্ণি এলাকায় এক ব্যক্তির দেহে এমন দৃশ্য দেখা যায়। রাতে টিভিতে সেই ঘটনা দেখে রীতিমতো
আতঙ্কে ছিলেন বালির বাসিন্দা লক্ষ্মী শূর। কারণ গত ৯ তারিখ ভ্যাকসিন নিয়েছেন তিনি।নদিয়ার
ঘটনা দেখার পর নিজের দেহে পরীক্ষা করতে গিয়ে
সেই একই দৃশ্য দেখতে পান তিনি। দেখেন লোহার হাতা চামচ বা সেফটিনের মতো সামগ্রী খুব
সহজেই তাঁর গায়ে আটকে যাচ্ছে।
কিন্তু শরীরে ধাতব বস্তু আটকানো কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়, এর সাথে ভ্যাকসিনেরও
কোন সম্পর্ক নেই বলে দাবি পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের
হুগলি জেলার অন্যতম সংগঠক অমিত মুখোপাধ্যায় নিজের এবং তাঁর স্ত্রীর শরীরে
একইভাবে ধাতব বস্তু আটকে দিয়ে দেখান। অমিতবাবু ভ্যাকসিন নিলেও স্ত্রী নেনি। কিন্তু
দুজনের শরীরেই ধাতব জিনিস আটকাচ্ছে।
বিজ্ঞান মঞ্চের অমিতবাবু বলেন,
শরীরে ধাতব বস্তু আটকানো আসলে কোনও ভ্যাকসিনের কারনে নয়, বস্তুর আসঞ্জন ক্রিয়ার ফলেই
এই ধরনের ঘটনা ঘটে। দুটি ভিন্ন বস্তুর অনু পরস্পরের সংস্পর্শে এলে চুম্বকীয় আকর্ষন
তৈরী হয়।
এ ব্যাপারে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপারেন্টেন্ড তারক
বর্মন জানান, কোভিশিল্ড হোক বা কো-ভ্যাকসিন! মানব দেহ কোনভাবেই, চুম্বকীয় ক্ষেত্র
তৈরি হয় না ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ো ফিজিক্সের অধ্যাপক সুখেন দাসের কথায়,
টিকা নেওয়ার পর শরীরে ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হওয়ার ঘটনার কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি
নেই। স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনের ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রাক্তন
অধ্যাপক শান্তনু ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, শরীরে ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হলেও টিকার
জন্যেই হয়েছে বলা যাবে না।
0 মন্তব্যসমূহ